শনিবার, ১১ই অক্টোবর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৬শে আশ্বিন, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১৮ই রবিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

হাসানুজ্জামান ও আজিমের ছকেই মিথ্যা ঘোষণায় আনা হচ্ছিলো আটক হওয়া ৫ ট্রাক রপ্তানী পণ্য

হাসানুজ্জামান ও আজিমের ছকেই মিথ্যা ঘোষণায় আনা হচ্ছিলো আটক হওয়া ৫ ট্রাক রপ্তানী পণ্য
হাসানুজ্জামান ও আজিমের ছকেই মিথ্যা ঘোষণায় আনা হচ্ছিলো আটক হওয়া ৫ ট্রাক রপ্তানী পণ্য

নিজিস্ব প্রতিবেদক :: সাম্প্রতিক ভারতের প্রেট্টাপোল বন্দরে বাংলাদেশে প্রবেশ অপেক্ষায় থাকা মিথ্যা ঘোষণায় ভারতীয় ৫ট্রাক রপ্তানী পণ্য আটকের ঘটনায় দুদেশের কাস্টমস ও বন্দরের আমদানি-রপ্তানীর বানিজ্যিক কার্যক্রমে কড়াকড়ি আরোপসহ শুল্ক গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মতৎপরতা বেড়েছে।

আলোচিত পণ্য চালানটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মহলে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষন।আটক হওয়া পণ্যচালানটির রপ্তানীর জন্য প্রস্তুতকরা বস্তার গায়ে এস আর ইন্টারন্যাশনাল,এস আর পারভেজ,এস আর ইন্টারন্যাশনাল,রাজন সেন,জেজে সোহেল,আজিম, সিধু, শাকিল এইসপি, আবুসাঈদ নামের সংকেত ব্যবহার করা হয়েছে বলে ভারতীয় সি এন্ড এফ এজেন্ট ব্যবসায়ীক সূত্র নিশ্চিত করেন।এছাড়াও ৫টি ট্রাকে মোটরসাইকেল পার্টসের মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে শাড়ি,এমটিশেন জুয়েলারী,ইলেকট্রনিক্স,কসমেটিক্স সহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য পাঠানো হচ্ছিলো বলে জানান।

এ নিয়ে দেশের একাধিক অঞ্চলিক পত্রিকা ও অনলাইন পোর্টালে ধারাবাহিক প্রতিবেদন প্রকাশ হচ্ছে।মিথ্যা ঘোষণার আটক হওয়া পন্য চালাটি কার তা নিয়ে দুদেশের কাস্টমস কর্তৃপক্ষ অফিসিয়ালি বিবৃতি না দিলেও একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ,স্থানীয় ব্যাবসায়িক মহলের দেওয়া তথ্য মতে ভারতে আটক হওয়া আনুমানিক ১৫ কোটি টাকা মূল্যের পণ্য চালানটির আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান হলো মেসার্স জামান ট্রেডার্স।এছাড়ও আরো ৫/৬ জন আমদানি কারকের বিভিন্ন ধরনের( অ্যাসোট্রেড গুডস )মালামাল রয়েছে ঐ পণ্য চালানে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আমদানি কারকের দাবি আটকৃত পণ্য চালানটি ছাড় করানোর দায়িত্বে ছিলো পুটখালী ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামীলীগ নেতা হাদিউজ্জামানের আপন দুই ভাই হাসান ও তৌহিদ। এরা দীর্ঘবৎসর ধরে হাদিউজ্জামানের সহায়তায় শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বেনাপোল কাস্টমস হতে পণ্য খালাস নিয়েছে,যা কাস্টমস হাউসের সুষ্ঠ তদন্তে বেরীয়ে আসবে।

ঢাকার চক,নিউমার্কেট,উর্দু রোড,মীরপুর, উত্তরা,বংশাল ও ইসলামপুর এলাকার মাঝারি শ্রেনীর ব্যবসায়ীদের কাছ হতে কেজি চুক্তিতে উচ্চ মূল্যে ক্যারিং কন্টাক নিয়ে নিজ নামে বা অন্য নামে এলসি খুলে ভারত হতে আমদানি পণ্য এনে তা নাম মাত্র রাজস্ব দিয়ে আবার কখনো রাজস্ব ছাড়াই বন্দর হতে পণ্য খালাস নিয়ে কথিত ভাই ভাই সিন্ডিকেট তাদের শুল্ক ফাঁকির ব্যবসা পরিচালনা করে থাকে।

গত ৫ আগস্ট ২৪ পরবর্তী সময়ে হাদিউজ্জামান পলাতক হয়ে পড়লে পুরাতন ব্যবসায়িক পার্টনার আজিমের মাধ্যমে ভাড়া নেওয়া ভিন্ন ভিন্ন লাইসেন্স ব্যাবহার করে সরকারী শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বন্দর হতে আমদানি পণ্য ছাড় করিয়েছে হাসানুজ্জামান ও তৌহিদ।

সূত্রটির দেওয়া তথ্য মতে শুল্ক ফাঁকি কাজে লাইসেন্স ব্যবহৃত সি এন্ড এফ এজেন্টগুলো হলো-ওমর এন্ড সন্স,নিরা এন্টার প্রাইজ,আজিম এন্টার প্রাইজ,জারিন এন্টার প্রাইজ,আলী কদর এন্ড সন্স,এস এ ট্রেডার্স ও রিমু এন্টার প্রাইজ।

এ নিয়ে গত বৃহষ্পতিবার (৪সেপ্টেম্বর২০২৫) যশোর থেকে প্রকাশিত প্রতিদিনের কথায় “বেনাপোল বন্দরের শুল্ক ফাঁকি চক্রের হাসান ও আজিম সিন্ডিকেটের হোতরা অধরা” শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হয়। একই দিনে যশোর থেকে প্রকাশিত দৈনিক রানার পত্রিকায় মেসার্স ওমর এন্ড সন্স এর স্বত্বাধিকারী মোঃ ইউসুফ আলী ও মেসার্স জামান ট্রেডার্স এর স্বতাধিকারী মোঃ হাসানুজ্জামান তাদের নামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানান।

এর আগে দৈনিক দৈনিক রানারের অফিসিয়াল পেজ হতে ৫ ট্রাক রপ্তানী পণ্য আটকের ঘটনা নিয়ে তথ্য বহুল ভিডিও প্রতিবেদন ছাড়লে তা দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়।

বেনাপোল বন্দরে শুল্ক ফাঁকি চক্রের অনুসন্ধান কালে দেখা যায়,গত ৫ আগস্ট ২০২৪ ইং পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বেনাপোল বন্দরে স্থানীয় একটি চক্র ষোষণা বর্হিভূত,মিথ্য পণ্য ঘোষণা দিয়ে ও পণ্য খালাসে কাস্টমসে জাল কাগজ পত্র দাখিল করে বিপুল অঙ্কের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে বন্দর হতে পণ্য নিয়ে গেছে।

এ সংক্রান্তে অভিযোগের প্রেক্ষিতে এনবি আর ও বেনাপোল কাস্টমস হাউস যৌথ ভাবে তদন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।এমনকি এসব ঘটনা নিয়ে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের সাবেক কমিশনার মোঃ কামরুজ্জামান( কাজল )এর বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান চলছে।

এ সময় বেনাপোল বন্দরের ২০/২৫জন অসাধু ব্যবসায়ী( আমদানি কারক )বেনাপোল কাস্টমস ও বন্দরের একাধিক অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজজে ঘুস বানিজ্যে মত্ত হয়ে সরকারী রাজস্ব ফাঁকি দিতেই গড়ে তুলেছে কথিত ভাই ভাই সিন্ডিকেট ।এই সিন্ডিকেটের অন্যতম সদস্য হিসাবে হাসানুজ্জামান,তৌহিদ,আজিম ও ইকরামুল কবীর সোহাগের নাম ওঠে এসেছে যারা ইতিপূর্বেও একাধিক রাজস্ব ফাঁকি কান্ডে ও অবৈধ্য ব্যবসা পরিচালনায় জড়িত।

আমদানি কারক হয়ে স্বল্প সময়ে জিরো থেকে হিরো বনে যাওয়া দূর্গাপুরের মৃত ইহান আলীর ছেলে আজিমের নামে অস্ত্রমামলাসহ একাধিক মামলা চলমান রয়েছে বলে জানা গেছে।

বেনাপোল বন্দরের শুল্ক ফাঁকি চক্রের সদস্যরা শক্তিশালী নেটওয়ার্কিং ব্যবস্থা গড়ে তুলে অনায়াসে ভারতের বনগাঁ টু ঢাকা রুটের প্রশাসনের বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার নজর এড়িয়ে বা তাদের সাথে সখ্যতা গড়ে কোটি কোটি টাকা মূল্যের শুল্ক ফাঁকির পণ্য চালান নিরাপদে পৌঁছে দিয়ে আসছিলেন।

প্রতিবেদনে উল্লেখিত অসাধু ব্যবসায়ীদের সাথে যোগা যোগের চেষ্ঠা চালালেও সাক্ষাৎ না মেলায় তাদের বক্তব্য জানা যাইনী।

আটককৃত পণ্য চালান সম্পর্কে বেনাপোল কাস্টমস হাউসের ইনভেজটিকেশন রিসার্স ম্যানেজমেন্ট( আইআরএম ) উপ কমিশনার রাফেজা সুলতানা গণমাধ্যমকর্মীদের জানান,বাংলাদেশে প্রবেশকালে ভারতে একটি পণ্য চালান আটকের খবর পেয়েছি,বেনাপোল কাস্টমস কর্মকর্তাদের সচেতন থাকতে বলা হয়েছে। অবৈধ্যভাবে কোন পণ্য চালান চলে না যায় সেজন্য শতভাগ পরীক্ষণ করতে বলা হয়েছে।

অপর দিকে পেট্ট্রাপোল বন্দরে মিথ্যা ঘোষণায় রপ্তানীপণ্য আটক কান্ডে দুদেশের পণ্য খালাস প্রক্রিয়ায় কড়াকড়ি আরোপে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্বচ্ছ আমদানি কারকেরা।

তাদের দাবী বেনাপোল বন্দরের কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য স্বচ্ছ ব্যবসায়ীরা হয়রানির স্বীকার হচ্ছে এর ফলে বানিজ্য গতি মন্থর হওয়ায় সময়মত আমদানি পণ্য কল কারখানায় পৌঁছানো সম্ভব হচ্ছে না। তারা দ্রুত বন্দরের চিহ্নিত শুল ফাঁকিবাজ আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ও তাদের সহযোগী সি এন্ড এফ এজেন্টদের বিরুদ্ধে বেনাপোল কাস্টমস কর্তৃপক্ষের কার্যকারী ও শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান।

সম্পর্কিত