সোমবার, ৭ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ, ২৩শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, ১২ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

পাহাড়ে আম চাষে বছরে ৩০ লাখ আয় মংশিতুর

পাহাড়ে আম চাষে বছরে ৩০ লাখ আয় মংশিতুর
পাহাড়ে আম চাষে বছরে ৩০ লাখ আয় মংশিতুর

খোকন বিকাশ ত্রিপুরা জ্যাক ( খাগড়াছড়ি ) জেলা প্রতিনিধি :: সরকারি চাকরি ছেড়ে পাহাড়ি গ্রামে ফিরে এসে আম চাষে বছরে প্রায় ৩০ লাখ টাকা আয় করছেন খাগড়াছড়ির তরুণ উদ্যোক্তা মংশিতু চৌধুরী( ৩৪ )। তিনি ১৬ বছর চাকরি করেছেন বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ ( বিজিবি )-তে। প্রথমে সিপাহী পদে, পরে মেডিকেল সহকারী পদে পদোন্নতি পেয়ে রংপুর জেলায় কর্মরত ছিলেন।

কিন্তু হৃদয়ে লুকিয়ে ছিল ভিন্ন স্বপ্ন—নিজ মাটিতে কিছু করার। তাই ২০২২ সালে স্বেচ্ছায় অবসর নিয়ে ফিরে আসেন খাগড়াছড়ি সদর উপজেলার কমলছড়ি ইউনিয়নের ৪নং হেডম্যান পাড়ায়। সেখানে বাবা থুইলা অং চৌধুরীর সঙ্গে শুরু করেন ৩৫ একর জমিতে আম বাগান।

মংশিতুর বাগানে শুধু দেশি নয়, চাষ হচ্ছে বিশ্বজুড়ে খ্যাত ৫৪ জাতের আম। উল্লেখযোগ্য জাতগুলো হলো- সূর্য্য ডিম,কিং অফ চাকাপাত, মিয়াজাকি, রেড পালমার, অস্টিন, আলফেনসো, কেশর, তোতাপুরি, ব্ল্যাকস্টোন, রেড লেডি, সিনসিন, গ্লেন, হানি ডিউ, কিউসাভয়, ব্রুনাই কিং সহ অসংখ্য নাম।বর্তমানে বাগানে প্রায় ৫ হাজার আম গাছ রয়েছে। এবছর ৩০টির মতো জাতে ফলন এসেছে।

“আমি নিজেই পরিকল্পনা করি, নিজে দাঁড়িয়ে থাকি বাগানে। আমের যত্ন নিই সন্তান স্নেহে। চাকরির থেকেও এই কাজটা বেশি তৃপ্তিদায়ক।” — বললেন মংশিতু।

শুধু নিজের স্বপ্ন নয়, এই উদ্যোগে উপকৃত হচ্ছেন স্থানীয় মানুষও। সারাবছর ১২-১৫ জন নিয়মিত শ্রমিক কাজ করেন। আমের মৌসুমে সেই সংখ্যা দাঁড়ায় ৪০-৫০ জনে।

বেলপতি ত্রিপুরা, বাগানের নিয়মিত শ্রমিক বলেন:“এখানে কাজ করে ভালোই চলি। ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ চালাতে পারছি।”

মংশিতুর বাগানে উৎপাদিত আম বাজারে ও অনলাইনে বিক্রি হয়। বিশেষ করে বিদেশি জাতগুলো বিক্রি হয় সূলভ মূল্যে।

‘কিং অফ চাকাপাত’ জাতের আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫০-৫০০ টাকা দরে! “সব খরচ বাদ দিয়েও বছরে প্রায় ২০-৩০ লাখ টাকা লাভ হয়। এখানেই শান্তি খুঁজে পেয়েছি,”—বললেন মংশিতু।

খাগড়াছড়ি কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে খাগড়াছড়ি জেলায় আম চাষ হয়েছে ৩,৬৪৯ হেক্টর জমিতে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫৪ হাজার মেট্রিক টন। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপ-পরিচালক মো. বাছিরুল আলম বলেন “খাগড়াছড়ির আম ফরমালিনমুক্ত হওয়ায় সারাদেশে এর চাহিদা বেশি। এবার আমের ফলনও ভালো হয়েছে।”

থুইলা অং চৌধুরী ও থুইম্রা সং চৌধুরী দম্পতির পাঁচ সন্তানের মধ্যে চতুর্থ মংশিতু এখন পাহাড়ে তরুণ উদ্যোক্তাদের আইকন হয়ে উঠেছেন। তাকে দেখে এলাকার অনেক তরুণ এখন চাকরির পেছনে না ছুটে নিজ উদ্যোগে কিছু করতে আগ্রহী হচ্ছেন।

মংশিতু প্রমাণ করে দিয়েছেন, সাফল্য শুধু শহরে নয়, পাহাড়ের গাছগাছালির মাঝেও গড়ে ওঠে। শুধু দরকার—সাহস, নিষ্ঠা আর স্বপ্ন দেখার মানসিকতা। সরকারি চাকরি ছেড়ে স্বপ্নের পথে হাঁটার যে ঝুঁকি তিনি নিয়েছিলেন, আজ তা হয়ে উঠেছে সম্ভাবনার বাতিঘর।

সম্পর্কিত