
মোঃ মকবুলার রহমান স্টাফ রিপোর্টার :
২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট ঘিরে অর্থনৈতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রে রয়েছে এলডিসি থেকে উত্তরণের প্রভাব। বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (এলডিসি) তালিকা থেকে বের হয়ে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পা রাখতে যাচ্ছে—যা একদিকে গৌরবজনক অর্জন হলেও, অন্যদিকে কিছু কাঠামোগত চ্যালেঞ্জও তৈরি করছে, বিশেষত দেশীয় শিল্প খাতের জন্য।
উত্তরণের পর আর আগের মতো যেকোনো পণ্যে স্বেচ্ছায় সম্পূরক বা নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক আরোপ করার সুযোগ সংকুচিত হয়ে আসবে। ফলে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাসের বাধ্যবাধকতা তৈরি হবে, যা দেশীয় উৎপাদকদের প্রতিযোগিতার ময়দানে কিছুটা দুর্বল করে তুলতে পারে। দেশ রূপান্তরের বরাত দিয়ে বিবিসি বাংলা এমনটি জানিয়েছে।
এই পরিবর্তন মোকাবিলায় সরকার নানামুখী প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাজেটে প্রস্তাব করা হয়েছে ১৭২টি পণ্যে সম্পূরক শুল্ক কমানোর এবং শতাধিক পণ্যে তা পুরোপুরি তুলে দেওয়ার। যদিও এতে রাজস্ব আয় হ্রাসের আশঙ্কা রয়েছে, তবু দীর্ঘমেয়াদে শিল্পের সক্ষমতা বাড়ানোকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।
বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশ আসে আমদানিনির্ভর শুল্ক-কর থেকে। ফলে এই উৎসে আয় কমে গেলে সরকারকে বিকল্প অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আয় বাড়াতে হবে। এজন্য নির্দিষ্ট কিছু পণ্যে শুল্ক বাড়ানোর প্রস্তাবও রয়েছে। যেমন, তামাক বীজ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকের কাঁচামালে অতিরিক্ত শুল্ক বসানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে।
একইসঙ্গে শিল্পের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা ধরে রাখতে চামড়া ও সিমেন্টশিল্পে ব্যবহৃত কাঁচামালের ওপর শুল্ক হ্রাসের চিন্তাও রয়েছে। এর পাশাপাশি, একটি যুগোপযোগী এবং উন্নয়নবান্ধব ট্যারিফ পলিসি গঠনের মাধ্যমে শুল্ক কাঠামোকে আধুনিক করার প্রক্রিয়া চলছে, যাতে উত্তরণ-পরবর্তী বৈশ্বিক বাজারে বাংলাদেশ আরও দক্ষতার সঙ্গে অংশ নিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এলডিসি থেকে উত্তরণ একটি তাৎক্ষণিক চ্যালেঞ্জ বটে, তবে দীর্ঘমেয়াদে এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ভিত্তিকে শক্তিশালী করার এক বড় সুযোগ। সুশৃঙ্খল প্রস্তুতি ও সঠিক নীতিনির্ধারণের মাধ্যমে দেশীয় শিল্পের জন্য এ উত্তরণ হতে পারে সক্ষমতার নতুন ভিত্তিপ্রস্তর।