যশোর শহরের কেন্দ্রেই দাঁড়িয়ে আছে বিশাল স্থাপনার মণিহার সিনেমা হল। একসময় শুধু যশোর নয়,গোটা বাংলাদেশের সিনেমাপ্রেমীদের কাছে নামটি ছিল গৌরবের। ১৯৮৩ সালের ৮ ডিসেম্বর যাত্রা শুরু করা এ প্রেক্ষাগৃহ তখন এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহত্তম হলে পরিণত হয়েছিল। ১ হাজার ৪০০ আসনের আধুনিক স্থাপত্যশৈলীর এই হলটির নকশা ও সাজসজ্জার কাজ করেছিলেন কিংবদন্তি শিল্পী এসএম সুলতান।
প্রথম দিকে প্রায় প্রতিদিনই উপচে পড়া ভিড় থাকত মণিহারে। দর্শকের করতালি আর শিসে মুখর হয়ে উঠত চারপাশ। একসময় মনে হতো সিনেমা মানেই মণিহার। সময়ের পালাবদলে এখন সেই জৌলুস প্রায় হারিয়ে গেছে। বড় পর্দার মোহ টেনে নিতে পারছে না দর্শককে। টিকে আছে কেবল দুই ঈদ মৌসুমে, যখন নতুন ছবি মুক্তি পায় তখন মানুষ পরিবার নিয়ে সিনেমা হলে আসেন। বছরের বাকি সময়ে খরচ তুলতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে হল কর্তৃপক্ষকে।
মণিহারের কর্ণধার জিয়াউল ইসলাম মিঠু বলেন,‘ঈদ ছাড়া মণিহার আর খরচ তুলতে পারে না। দোকান,হোটেল আর কমিউনিটি সেন্টারের ভাড়াই এখন আমাদের ভরসা।’
দেশি ছবির অভাবই প্রধান সংকট বলে মনে করেন তিনি। নতুন ছবির অভাবে বর্তমানে টলিউডের পুরোনো সিনেমা চালানো হচ্ছে। জিতের ‘অভিমান’ সিনেমাটি এরই মধ্যে চারবার চালাতে হয়েছে। ‘দর্শক সমাগম নেই বললেই চলে। কারণ এ ছবি তো ইউটিউব বা টেলিভিশনে হাতের নাগালেই পাওয়া যায়,বলেন মিঠু।
আক্ষেপ করে মিঠু বলেন, ‘বাংলাদেশি সিনেমার দুর্দিন মণিহারের ভবিষ্যৎ আরও অন্ধকার করে তুলেছে। গত কোরবানির ঈদের পর নতুন কোনো ছবি পাইনি। যে ক’টি এসেছে, তা আর্ট ফিল্ম। এগুলোতে দর্শক টানে না। এভাবে হলে টিকে থাকা সম্ভব নয়।’
বাংলাদেশে ছিল প্রায় ১ হাজার ৩০০ সিনেমা হল।এখন সেই সংখ্যা কমে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৭০-৭৫টিতে। তার মধ্যেও অনেকগুলো টিকে থাকার লড়াই করছে। মণিহারও হয়তো সেই তালিকাতে এখন।